ইরানে চলছে রাষ্ট্রীয় শোক, নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২৮ জুন
![](http://www.europentv.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/05/21/iraan-thaamb.jpg)
ইরানে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে চলছে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগামী ২৮ জুন ভোটগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। খবর বিবিসির।
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসি নিহত হন। একই দুর্ঘটনায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানেরও মৃত্যু হয়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, রোববার তারা যে হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করছিলেন, সেটি বিধ্বস্ত হলে তারা নিহত হন। ৬৩ বছর বয়সী ইব্রাহিম রাইসিকে সর্বোচ্চ নেতার সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আয়াতুল্লাহ খামেনি এ ঘটনায় ইরানের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন ভাইস প্রসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবের। ইরানের মন্ত্রিসভা উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাগেরি কানিকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় গত রোববার (১৯ মে) স্থানীয় সময় বিকেলে দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারটি গতকাল সোমবার সকালে শনাক্ত করা হয়। পরে এক সরকারি বিবৃতিতে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, ‘আমি আমার প্রিয় ইরানি জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে দেশে পাঁচ দিনের সরকারি শোক ঘোষণা করছি।’
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2024/05/21/iraan-inaar-1.jpg)
দুর্ঘটনার পর ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন। এরপর সোমবার সকালে একটি ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, হেলিকপ্টারটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপরই উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে ভ্রমণ করছিলেন রাইসি। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী শহর জোলফার কাছে বিমানটি বিধস্ত হয়েছে। পরে বলা হয়, এটি উজি গ্রামের কাছে আরও পূর্ব দিকে।
রাইসির সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান, ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নরসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও দেহরক্ষীরা ছিলেন।
দুর্ঘটনার পরপর দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছিলেন, যাই হোক না কেন ইরান সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রেসিডেন্ট মারা গেলে ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, খামেনির সম্মতিক্রমে ভাইস ফার্স্ট প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেবেন। ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
৬৩ বছর বয়সী কট্টরপন্থী ইব্রাহিম রাইসি এর আগে দেশের বিচার বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাকে খামেনির একজন অনুসারী হিসেবে দেখা হয়। কিছু বিশ্লেষক মনে করতেন, খামেনির মৃত্যু বা অবসর গ্রহণের পরে ৮৫ বছর বয়সী এ নেতার স্থলাভিষিক্ত হতেন রাইসি।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2024/05/21/iran-inar-2.jpg)
গত রোববার ভোরে আজারবাইজান সীমান্তে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন রাইসি। আরাস নদীর ওপর দু-দেশের নির্মিত তৃতীয় বাঁধ এটি। ২০২৩ সালে তেহরানে আজারবাইজান দূতাবাসে বন্দুক হামলা ও ইসরায়েলের সঙ্গে আজারবাইজানের কূটনৈতিক সম্পর্কসহ দুই দেশের মধ্যে শীতল সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এই সফর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ইরানে ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাইসি জয়ী হন। ওই নির্বাচনে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছিল। ১৯৮৮ সালে রক্তক্ষয়ী ইরান-ইরাক যুদ্ধ শেষে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দি মৃত্যুদণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রাইসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। রাইসির অধীনে ইরান প্রায় উইপন-গ্রেড স্তরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের ক্ষেত্রে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে।