নারী দিবসে শেকল ভাঙার প্রত্যাশা দেশের প্রথম নারী বক্সারের

Looks like you've blocked notifications!
তামান্না হক। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

‘পরাজিত ব্যক্তির সবসময় বাহানা তৈরি থাকে, যেখানে বিজয়ীর ভাবনায় থাকে উদযাপন। কাজ সম্পর্কে পরাজিতের দৃষ্টিভঙ্গি—এটি হয়তো সম্ভব কিন্তু কঠিন। আর বিজয়ী ভাবে, এটি কঠিন কিন্তু সম্ভব।'

কথাগুলো নারী ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম পথিকৃৎ আলথিয়া গিবসনের। মার্কিন এই তারকা বিংশ শতাব্দীতে পেশাদার টেনিস ও গলফের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ইতিহাসের প্রথম পেশাদার কৃষ্ণাঙ্গ নারী ক্রীড়াবিদ তিনি। প্রথম নিয়ে যখন কথা, তখন বাংলাদেশে আছেন একজন। তামান্না হক, দেশের প্রথম নারী বক্সার।

তামান্না বক্সিংয়ে আছেন ২০১৪ সাল থেকে। শখের বশে নয়, ইচ্ছা ও আগ্রহ থেকে আসেন বক্সিংয়ে। ভেবেছিলেন বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন লাল সবুজের পতাকা। ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্বপ্ন অধরা রয়ে গেছে তার। বারবার সুযোগ এলেও বক্সিং ফেডারেশনের সহায়তা তো পাচ্ছেনই না, পৃষ্ঠপোষণায়ও এগিয়ে আসছে না কেউ।

বক্সিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা তামান্না এক দশক পর কেবল বক্সিং রিংয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। কিক বক্সিং, মার্শাল আর্ট, কুংফুর পাশাপাশি তিনি এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ফিটনেস প্রশিক্ষক। নিয়েছেন মিলিটারি প্রশিক্ষণও। এর বাইরে কাজ করছেন রেপ ভিক্টিম ও নারীদের সেল্ফ-ডিফেন্স নিয়ে। তার মতে, নারীদের আত্মরক্ষার কৌশল রপ্ত করা ভীষণ জরুরি। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে করা সাক্ষাৎকারে জানালেন কেন তার এই উপলব্ধি!

এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তামান্না বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমি একদিন রমনার পথ ধরে হাঁটছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করি, কয়েকজন বখাটে আমার পথ রোধ করেছে। পেছন ফিরে দেখি, আমার চারপাশ ঘিরে রেখেছে ওরা। তখন আমি বক্সিং ছাড়া কিছুই জানি না। আমার মনে হলো, বড় কিছু ঘটতে পারে। দ্রুত রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়াই। একটা সিএনজি এলে কোনোমতে চালককে বলি, আমি বিপদে পড়েছি। দ্রুত এখান থেকে নিয়ে চলুন। এরপর আমার উপলব্ধি হলো নারীদের জন্য কিছু করতে হবে। প্রতিরক্ষা কৌশল জানা থাকলে অন্তত আমার মতো খারাপ অবস্থা হবে না তাদের। এ ক্ষেত্রে পরিবারগুলোকেও সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’

নারীদের এগিয়ে নেওয়ার এই সংগ্রামের পাশাপাশি তামান্নার স্বপ্ন দেশের জন্য আন্তর্জাতিক পদক নিয়ে আসা। গ্রিস, ইতালিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপে সুযোগ পেলেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অংশগ্রহণ করা হয়নি। আক্ষেপের সঙ্গে ক্ষোভও যেন ঝরে পড়ল আলোকিত এই নারীর কন্ঠে।

এই বক্সার বলেন, ‘আমাদের দেশে কেবল ক্রিকেট-ফুটবল নিয়ে মাতামতি হয়। অন্য খেলাগুলো অবহেলিত হচ্ছে। অথচ, সুযোগ পেলে আমরাও দেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি। গ্রিসে চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার সুযোগ এসেছিল। যেতে পারিনি। আগামী মাসে ইতালিতে খেলা আছে, যেতে পারব কি না জানি না। আমার নিজের সামর্থ্যের ওপর আস্থা আছে। স্বর্ণ কিংবা রোপ্য এনে দেওয়ার মতো যোগ্যতা থাকলেও দেখার কেউ নেই।’

তামান্না হক শেকল ভাঙার গান গেয়ে এতটা পথ এসেছেন। পাড়ি দিয়েছেন কঠিন পথ। সামনেও তাকে আরও অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মখীন হতে হবে, সেটি জানেন। সব জেনেই এগিয়ে যেতে চান। নারীদের জন্য একটা সুন্দর ও সাহসী সমাজ গঠনে কাজ করে যেতে চান আমৃত্যু।