নির্বাচনি প্রচারে বাধা-মারপিটের অভিযোগ, কাজীপুরের খলিলুর রহমানকে শোকজ

Looks like you've blocked notifications!
সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন ইনসেটে অভিযুক্ত প্রার্থী খলিলুর রহমান। ছবি : এনটিভি

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থীকে প্রচার-প্রচারণায় বাধা, প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থককে মারপিটের অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) হয়েছিল সংবাদ সম্মেলন। অভিযোগের ভিত্তিতে অপর চেয়ারম্যানপ্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান সিরাজীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। আজ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের সই করা এক চিঠিতে সিরাজীকে শোকজ দেওয়া হয়। এতে আগামী তিন দিনের মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

খলিলুর রহমান শিরাজী কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। শোকজে রিটানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, আনারস প্রতীকের প্রার্থী খলিলুর রহমান সিরাজী তার কর্মী সমর্থকদের দিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে অপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবুল কালাম আজাদ (দোয়াত কলম) ও কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলমের (ঘোড়া) নির্বাচনি প্রচারে বাধা প্রদান এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। যার ভিডিও ফুটেজসহ নির্বাচন অফিসে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে কাজীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন তারা, যা উপজেলা পরিষদ (নির্বাচনি আচরণ) বিধিমালা-২০১৬-এর বিধি ৩, ১৮ ও ৩১ এর পরিপন্থী।

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা-২০১৬ এর বিধি ৩ অনুযায়ী, ‘আইন এবং এই বিধিমালার অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, নির্বাচনি প্রচারণার ক্ষেত্রে যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা এর মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্রপ্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির সমান অধিকার থাকবে’ এবং ওই বিধিমালার বিধি ৩১ অনুযায়ী’, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অর্থ, অস্ত্র ও পেশী শক্তি বা স্থানীয় ক্ষমতার মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করা যাবে না।’ গত ১৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন সব মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছিল এবং আচরণ বিধিমালার বুকলেট সরবরাহ করা হয়েছিল। এ ছাড়া ১৬ এপ্রিল উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা-২০১৬-এর বিধানাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালন করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। ২৩ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের আগে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আচরণ বিধিমালার বুকলেট সরবরাহ করা হয় এবং আচরণ বিধি প্রতিপালনের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে অবহিত করা হয়। তা সত্ত্বেও আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে খলিলুর রহমান সিরাজীর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এই মর্মে পত্র প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে তাকে লিখিতভাবে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে শহরের একটি হোটেলে দুই চেয়ারম্যানপ্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ ও কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী খলিলুর রহমান সিরাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। সেখানে তারা বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান সিরাজী ও তার বাহিনী প্রতিটি ইউনিয়নে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন। আমাদের কর্মী সমর্থক প্রচার-প্রচারণায় নামলেই তাদের মারপিট করছে, পোস্টার ও লিফলেট কেড়ে নিচ্ছে ও ছিড়ে ফেলছে এবং নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দিয়েছে। গত ২৪ এপ্রিল প্রচারনার সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানকে মারপিট করা হয়েছে। এ নিয়ে দুই চেয়ারম্যানপ্রার্থী থানায় চারটি জিডি করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অভিযোগকারীদের দাবি, নির্বাচনের দিন খলিলুর রহমানের প্রতিটি বুথে দুজন ক্যাডার রাখবে। ভোটাররা চাপ বা টিপ দিয়ে ইভিএম ওপেন করে দিলে বুথের ভেতর খলিলের কর্মীরা ভোট দিয়ে দেবেন বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকির কারণে ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে এই দুই চেয়ারম্যানপ্রার্থী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত কোনো নির্দেশনাই খলিলুর রহমান মানছে না। প্রভাব বিস্তার করে মানুষের ভোটের অধিকার হরনের চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠ ভোট ও ভোটের পরিবেশ তৈরী করতে প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইল্ট্রেনিক্স মিডিয়ার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

যদিও খলিলুর রহমান সিরাজী তার বিরুদ্ধের সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা ভোট পাবে না বলে ভোট প্রার্থনার জন্য ভোটারদের কাছে না গিয়ে শুধু অভিযোগ করে যাচ্ছেন।