মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন চায় ইসি

Looks like you've blocked notifications!

এবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন দেখতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে প্রশাসন ও পুলিশকে নীতিতে অটল থেকে দায়িত্ব পালনের নিদের্শনা দিয়েছে তারা। এমনকি, বদলির ভয়ে কারও কাছে নির্বাচনে অবস্থান বিকিয়ে না দেওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকার কথা বলেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। ইসি আশ্বস্ত করেছে, তাদের নির্দেশনা মানার কারণে উচ্চমহল থেকে নির্বাচনে দায়িত্বরত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বদলির সুপারিশ এলে তা যথাযথ যাচাইয়ের পর প্রমাণ সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দুঃশ্চিন্তা না করার পরামর্শ দিয়ে ইসি বলেছে, নত হওয়ার চেয়ে বদলি সম্মানের।

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুলিশ-প্রশাসনের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে ইসিতে অনুষ্ঠিত সভায় উভয়পক্ষের উত্থাপিত ইস্যুতে তাদের আশস্ত করে কমিশন এসব কথা জানায়। সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা আরও জানিয়েছেন, মোবাইল সেবা; যেমন—বিকাশ, রকেট, নগদ ও মোবাইলের মাধ্যমে নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানো বন্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। 

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। তারা জানান, ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার। একই উপজেলা বা থানায় চাকরির কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশেষ করে মন্ত্রী-এমপিদের উপেক্ষা করে বা তাদের বাইরে গিয়ে চাকরি করা চ্যালেঞ্জ। বদলি কিংবা অনেক সময় তাদের কথা না শুনলে শাস্তির খড়গ নেমে আসে। আর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারাই মূল দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীদের কাছ থেকে উপঢৌকন ও উৎকোচ না নিয়েও কারও কারও পক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। 

আমন্ত্রিতদের পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে উত্থাপন করা হয়, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিজ উপজেলা থেকে না নিয়ে পাশের উপজেলা থেকে এনে দায়িত্ব দেওয়া হলে চাকরি হারানো কিংবা বদলি বা শাস্তির ভয় কোনোটাই থাকে না। এমনকি, তাৎক্ষণিক প্রভাবশালী প্রার্থীদের কাছে নিজের অস্বিস্ত বিকিয়ে দেওয়ার প্রশ্নও ওঠে না। ফলে পার্শ্ববর্তী উপজেলায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা করা হলো নির্বাচন অনেকটা প্রভাবমুক্ত হবে। জবাবে কমিশন এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। তবে, বিভিন্ন সংস্থা থেকে দলীয় ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের তালিকা করা হয়। তাই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

একইভাবে গ্রাম পুলিশ বা আনসার বা চকিদার-দফাদার সদস্যদের নিয়েও প্রশ্ন তোলেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন এসব সদস্যরা। তারা কেউ পক্ষপাতমূলক নয়। তাই নিজ এলাকার বাইরে থেকে অর্থাৎ, পাশের ইউনিয়ন থেকে এ বাহিনীর সদস্যদের বদলি করে এনে কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হলে নির্বাচনে অনেকটা প্রভাবমুক্তভাবে করা সম্ভব হবে। তবে, এ বিষয়ে কমিশন তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত না দিলেও বিবেচনায় রাখার বিষয়ে মৌনসম্মতি জ্ঞাপন করেন।

যদিও সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব ইস্যুতে। কারণ, দলীয় প্রধানদের নির্দেশ উপেক্ষা করে অনেকেই নিজ সন্তান-ভাই কিংবা পরিবারের আত্মীয়-স্বজনকে প্রার্থী করেছেন। প্রত্যাহার না করে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মাঠে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। সঙ্গে প্রশাসনকে তাদের পরিবারের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। এ নিয়ে সভায় পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে আর্জি জানান তারা। বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের পক্ষে কাজ না করলে অনেক সময় বদলির হুমকি আসে। পদোন্নতিসহ সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবীবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনে চাপ থাকবে। চাপ সবার ওপরে থাকে। তদন্তে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা। এমনকি, নির্বাচনের প্রচারে এমপিরা যেন অংশ নিতে না পারেন, সেজন্য সবাইকে অ্যালার্ট থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন তাহলে কমিশনকে জানালে তাৎক্ষণিক সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ ছাড়া সকালে ব্যালট ও ইভিএম কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া নিয়ে বাড়তি খরচ দাবি করেন জেলা প্রশাসকরা। কারণ হিসেবে বলেন, ঝুকিপূর্ণ এলাকায় ব্যালট বা ইভিএম আলাদাভাবে পাঠাতে হবে। এ কারণে খরচ দরকার। সভায় জামালপুরের ডিসি সদ্য শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করার যে বকেয়া টাকা আছে তা দ্রুত পরিশোধ করার দাবি তোলেন। আর কুড়িগ্রামের ডিসি দুর্গম এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানোর দাবি জানান। আর যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ থাকায় পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানান। এ ছাড়া মোবাইলে লেনদেন বন্ধ করার জন্য কমিশন মাঠ কর্মকর্তাদের সহায়তা চান। 

উপজেলা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা হতে পারে মন্তব্য করে সিইসি কাজী হাবীবুল আউয়াল বলেছেন, দেশের নির্বাচনে আবেগ অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্য নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। সুষ্ঠু ভোটে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে। 

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে আজ সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে সব বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক, জেলা প্রশাসক, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে স্বাগত ভাষণে সিইসি আরও বলেন, আবেগ-অনুভুতির কারণে নির্বাচনে কিছুটা উচ্ছৃখল অবস্থা তৈরি হতে পারে, সহিংসতা হতে পারে। এগুলো যেন না হয়, সেদিকটা আমাদের দেখতে হবে। নির্বাচন যাতে অবাধ হয়, ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে এসে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, সে বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি রাখতে হবে।