দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ : পাখা কিনতে পকেট ফাঁকা!

Looks like you've blocked notifications!
বৈদ্যুতিক পাখার বাজার। ছবি : ফোকাস বাংলা

এল নিনোর প্রভাবে তীব্র তাপপ্রবাহে গরমে অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের মানুষ। ইতোমধ্যেই বছরের সর্বোচ্চ ছুঁয়েছে ৪২ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। জনজীবনের পাশাাপশি এর প্রভাব পড়েছে প্রাণিকূল, শস্যের ক্ষেত; এমনকি সড়কেও। বিটুমিন গলে যাচ্ছে, আর সবজি যাচ্ছে মরে। এর মধ্যে আছে লোডশেডিং। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশেই বেড়েছে বৈদ্যুতিক পাখা, চার্জার ফ্যান, এসি, পোর্টেবল এসি ও হাতপাখার চাহিদা। আর তার ফায়দা লুটছেন একদল ব্যবসায়ী–বলে রয়েছে অভিযোগ। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দাম বেড়েছে কয়েকগুণ বলে দাবি ক্রেতাদের।

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর নবাবপুর, বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান ও পুরান ঢাকার দোকানগুলোতে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের তুলনায় প্রতিটি চার্জার ফ্যানের মান ও আকারভেদে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়েছে। বেশি বেড়েছে বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্যান। এসব ফ্যানের দাম পড়ছে চার হাজার থেকে আট হাজার টাকা। বিক্রেতারা জানান, বেচাকেনাও ভালো। বাজারে ১২, ১৪ ও ১৬ ইঞ্চির চার্জার ফ্যান বেশি চলছে। তবে স্ট্যান্ড ফ্যানের চাহিদাও ভালো।

নবাবপুর রোডের ডায়নামিক ফ্যানের দোকানদার রবিউল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা আগে যে দামে চার্জার ফ্যান কিনতাম এখন সেই দামে কিনতে পারছি না। পাইকারিতে চার্জার ফ্যানের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে বেড়ে গেছে।  এখন আমারও তো ব্যবসা করে চলতে হবে। পাইকারিতে বেশি দামে কিনে খুচরায় তো কম দামে বিক্রি করা সম্ভব না। বেশি দামে ছাতা বিক্রির ক্ষেত্রে একই অজুহাত দিয়েছেন বিক্রেতারা।

সুরাইয়া ইলেকট্রনিক নামের একটি দোকানে ডেমরা থেকে স্ট্যান্ড ফ্যান কিনতে আসা শফিক আহমেদ বলেন, ‘ছোট নন ব্র্যান্ডের টাইফুন ফ্যানগুলোর দাম চাইছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। অথচ গত বছর এগুলোর দাম ছিল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। গরম বেড়েছে এখন এক ফ্যানে কাজ হয় না। তাই আরেকটি ফ্যান কিনতে এসেছি। আরেকজন ক্রেতা বলেন, ডিফেন্ডার ব্র্যান্ডের ১২ ইঞ্চি ফ্যান কোথাও চাইছে তিন হাজার ৫০০ টাকা কোথাও চার হাজার টাকা। আর একই ব্র্যান্ডের ১৪ ইঞ্চি ফ্যান চাওয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট স্ট্যান্ড (৯-১০ ইঞ্চি) বা টাইফুন ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্ট্যান্ড ফ্যান বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ থেকে আট হাজার টাকায়। এ ছাড়া দেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান এক হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা বিদেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়।

জাকের হোসেন নামে এক বিক্রেতা বলেন, গরমে সারা শরীর পুড়ে যাচ্ছে। হাঁটার সময় বাতাস পেলেও সেই বাতাসে তীব্র গরম। তাই ৬০০ টাকা দিয়ে ছোট একটা চার্জার ফ্যান নিলাম। দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে এই ক্রেতা বলেন, আমার রুমমেট সপ্তাহখানেক আগে এই ফ্যান কিনেছে ৪৫০ টাকা দিয়ে। গত বছর এটার দাম ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। আজ ৬০০ টাকায় বিক্রি করছে। দোকানদারের সঙ্গে দামাদামির সুযোগ সেই। বলে, ভাই এক দাম। গরম বাড়ার সঙ্গে এই ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। এজন্য বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম রাখছে।

সেলিম উদ্দিন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, আমাদের মা-খালারা এসব হাতপাখা ব্যবহার করতেন। দাদা-দাদু বাড়ির উঠোনে বসে আমাদের এরকম হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতেন। আগে এসব হাতপাখার অনেক প্রচলন ছিল। এখন খুঁজেও পাওয়া যায় না। তবে, গ্রামে এখনও এগুলো আছে। দামের বিষয়ে এই ক্রেতা বলেন, অত বেশি না, তুলনামূলক কম। 

গাজীপুর থেকে পাইকারি দরে কিনে পুরান ঢাকার অলিগলি ও রাস্তায় ঘুরে এসব হাতপাখা বিক্রি করেন জাকির মিয়া (৬২)। তিনি জানান, গরমের শুরুতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ পিস হাতপাখা বিক্রি হতো। এখন হাতপাখার চাহিদা বেড়েছে। প্রতিদিন আগের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে চাহিদা বাড়ায় হাতপাখার পাইকারি দামও বেড়েছে। তিনি বলেন, তালপাতার হাতপাখা পাইকারি ৪০ টাকা দরে কিনে খুচরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি করি। আর কাপড়ের তৈরি হাতপাখা ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়, যার পাইকারি দাম পড়ে ৩০ টাকা। গরমের শুরুতে হাতপাখা বিক্রি করে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হতো। এখন দৈনিক এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা লাভ হচ্ছে।