বইমেলা আয়োজন বাংলা একাডেমির কাজ না : জাকির তালুকদার

Looks like you've blocked notifications!

একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯-এ অনেক নতুন বই আসছে কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদারের। কিছু বইয়ের অবশ্য বর্ধিত সংস্করণও আসছে। মেলার বই ও বইমেলার আয়োজন নিয়ে জাকির তালুকদার সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এনটিভি অনলাইনকে।

প্রশ্ন : এবারের মেলায় নতুন কী বই আসছে, পুনর্মুদ্রণ হচ্ছে কি কোনো বই?

জাকির তালুকদার : পাঠক যে বইটি পড়েননি, সেই বইটি যত বছর আগেই প্রকাশিত হোক না কেন, সেই পাঠকের কাছে তা নতুন বই। আক্ষরিক অর্থে এই প্রশ্নের যেটা উত্তর হয়, তা হচ্ছে, এই বইমেলাতে আমার নতুন বই আসছে তিনটি। কিশোর উপন্যাস ‘মুষ্টিবদ্ধ সেই হাত’(পুথিনিলয়), ‍গল্প লেখার গল্প নিয়ে বই ‘গল্পের জার্নাল’(ঐতিহ্য) ও উপন্যাস ‘মৃত্যুগন্ধী’(প্রথমা)। পুনর্মুদ্রণ এবং নতুন সংস্করণ হচ্ছে হচ্ছে চারটি বইয়ের। প্রবন্ধ ‘গল্পপাঠ’ (পুথিনিলয়), উপন্যাস ‘কুরসিনামা’( কবি প্রকাশন), উপন্যাস ‘কবি ও কামিনী’(প্রকৃতি), সম্পাদনা করেছি ‘প্রতিপাঠ উত্তরআধুনিকতা’(অগ্রদূত)। 

প্রশ্ন : নতুন বইগুলোর বিষয় নিয়ে কিছু বলুন।

জাকির তালুকদার : কিশোর উপন্যাসটি ‘মুষ্টিবদ্ধ সেই হাত’-এ বলা হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কেবলমাত্র ১৯৭১ সালের ঘটনা নয়। হাজার বছর ধরে চলে আসছে বাঙালির মুক্তিরযুদ্ধ। ১৯৭১ সালে তার একটি পরিণতি ঘটেছে। এটিকে আপনি বলতে পারেন আমার ‘পিতৃগণ’ উপন্যাসের কিশোর সংস্করণ।

‘মৃত্যুগন্ধী’ উপন্যাসে একজন ব্যর্থ কিন্তু কমিটেড লেখকের বেঁচে থাকার যুদ্ধ তুলে ধরা হয়েছে। স্বজনদের কাছ থেকে উপেক্ষা পেয়ে নিজেকে অজ্ঞাতবাসে নিয়ে গিয়ে, মৃত্যুর কাছে নিয়ে গিয়েও আবার জীবনের ডাকে ফিরে আসার ঘটনা, মানসিক-সামাজিক অভিঘাত আছে।

‘গল্পের জার্নাল’ একটি ভিন্ন ধরনের বই। বলতে পারেন বাংলাদেশে এই ধরনের বই এই প্রথম। সাতটি গল্প আছে। তার সাথে আছে সেই গল্পগুলো কীভাবে লিখিত হলো, সেই শানে নুজুল।

প্রশ্ন : এবারের মেলায় কোন বিষয়ের ওপর বই কিনবেন বা কাদের বই কিনবেন বলে ঠিক করেছেন?

জাকির তালুকদার : আমি প্রধানত কিনি অপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা, প্রবন্ধ, ইতিহাস, বিজ্ঞান বিষয়ক বই। শিল্পের বিভিন্ন প্রকরণ যেমন সিনেমা, শিল্পকলা বিষয়ক বই। জীবনী, সাক্ষাৎকার, অনুবাদ কিনি। কিছু গল্প-উপন্যাস-কবিতাও থাকবে।

প্রশ্ন : বয়সে বড় কাদের লেখা বই পড়েন? আর বয়সে ছোট কাদের লেখা বই ভালো লাগে?

জাকির তালুকদার : নাম বললে তো বিশাল এক তালিকা দেওয়া হবে। খুব পছন্দ আকিমুন রহমান, মনিরা কায়েস, ওয়াসি আহমেদের লেখা। কবিদের মধ্যে খুব কম উচ্চারিত হয় নূরুল হকের নাম। আমি তাঁর কবিতার বই কিনি। মঈন চেীধুরীর লেখা পড়ি। হায়াৎ মামুদ পড়ি তাঁর অসামান্য গদ্যের স্বাদের জন্য। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বই পড়ি খুব মনোযোগ দিয়ে। রাজু আলাউদ্দিনের অনুবাদ পড়ি।

অনুজদের মধ্যে অনেকেই বেশ প্রতিশ্রুতিশীল। তবে এখনো তাদের নিজস্ব সাহিত্যবোধের চিহ্ন ফুটে ওঠেনি। তবু বিষয়ভেদে তাদের অনেকের বই পড়ি। কবিতা থেকে প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গল্প-উপন্যাস। এই তালিকায় আমি কিন্তু প্রশান্ত মৃধা-আহমদ মোস্তফা কামাল-শামীম রেজাদের ধরছি না। তারা বয়সে কিছুটা ছোট হলেও লেখালেখির দিক থেকে আমার প্রায় সমসাময়িক।

নতুনদের জন্য এখন অনেক ধরনের পুরস্কারের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রায়ই ফেসবুকে এবং অন্য মিডিয়াতে দেখি অমুক তরুণ লেখক-কবি অমুক পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কৃত বইগুলো পড়ার চেষ্টা করেছি। এবং সত্যি বলতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হতাশ হয়েছি। দেখা যাক, কে কে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পারে। তখন তাদের কথা বলা যাবে।

প্রশ্ন : একুশে বইমেলা আয়োজন নিয়ে আপনার মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া বা কোনো পরামর্শ আছে কি?

জাকির তালুকদার : যে কথাটি আমি কয়েক বছর ধরে বলে আসছি, বইমেলার আয়োজন এবং ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থেকে বাংলা একাডেমিকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্যর সাথে বইমেলা কোনোভাবেই যায় না। এই দায়িত্বের কারণে বাংলা একাডেমির মূল কাজগুলোর খুবই ব্যাঘাত ঘটে। বইমেলা আয়োজন বাংলা একাডেমির কাজ না।

আয়োজনের পরিসর প্রতি বছর বাড়ছে। বইয়ের প্রদর্শনী এবং বিপননের সুবিধা হচ্ছে। তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমি বলেছিলাম, যারা নিজের খরচে বই প্রকাশ করে, তাদের বইগুলোর জন্য পাঁচটি স্টল বরাদ্দ করার কথা। সেগুলোর নাম হতে পারে স্বপ্রকাশ-১,২,৩,৪,৫। এটি হলে শত শত নতুন লেখক প্রকাশকের পেছনে ছোটার হাত থেকে বেঁচে যাবে।

মেলায় প্রবেশের জন্য ছুটির দিনগুলোতে লম্বা লাইনে অনেক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। প্রতিবন্ধী, বয়স্ক এবং অসুস্থদের জন্য প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা করা উচিত। বেশিরভাগ ৫০-ঊর্ধ্ব নারী-পুরুষ হাঁটুর অসুখে ভোগেন। তাদের জন্য লাইন ধরার বিধান না থাকাই ভালো।

কর্তৃপক্ষকে আবার মনে করিয়ে দিতে চাই যে, স্টল বরাদ্দের আগে প্রকাশকরা লেখকদের সাথে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেছেন, এমন দলিল অবশ্যই চাইবেন। তাতে লেখকদের রয়্যালটি পাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বাড়বে।